নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি বিওপিতে ১১ বিজিবির উদ্যাগে মানবিক সহায়তা

প্রকাশিত: ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২৫

 

মো. আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি:

 

     বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সীমান্ত  শুধু পাহারা নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এবার নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) কর্তৃক জামছড়ি বিওপি এলাকায় আয়োজিত হলো সচেতনতামূলক সভা, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি।

দিনব্যাপী আয়োজনে স্থানীয় প্রায় ২০০ জন অসহায়, গরিব ও দুঃস্থ নারী-পুরুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ গ্রহণ করেন।

এছাড়াও সীমান্তে মাদক, চোরাচালান, মাইন বিস্ফোরণ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মাইন বিস্ফোরণে আহত ৬ জন ভুক্তভোগীর মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

ময়না খাতুন (৭৬), স্থানীয় বাসিন্দা ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা গ্রহণকারী বলেন
“আমার ডায়াবেটিস ও চোখের সমস্যা অনেকদিন ধরে। টাকা না থাকায় চিকিৎসা করতে পারছিলাম না। বিজিবির এই ক্যাম্পে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়েছি আল্লাহ তাঁদের মঙ্গল করুক।”

তরিকুল ইসলাম (২৬), মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে পা হারিয়েছেন। তিনি বলেন—
“যখন আহত হই, তখন কেউ পাশে ছিল না। বিজিবির এই সহায়তা অন্তত কিছুটা ভরসা দিয়েছে। এখনো অনেক কষ্ট হয়, তবে আজকে মনে হলো কেউ আছে পাশে।”

ছালেহা বেগম (৬৫), খাদ্য সহায়তা পাওয়া একজন গৃহবধূ বলেন “আমাদের এখানে আয়-রোজগারের তেমন সুযোগ নেই। আজকে যে চাল-ডাল-তেল দিল, সেটা দুই সপ্তাহ চলবে। বিজিবির জন্য দোয়া করি।”

সচেতনতামূলক সভায় বক্তারা বলেন,
সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকি সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়া বিপজ্জনক—এটা জীবন ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

সভায় স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণে একটি ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার গৃহীত হয়—সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়ার জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন কায়েস।

তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক, অন্যান্য কর্মকর্তা, বিজিবি সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও জনসাধারণ।

অধিনায়ক তাঁর বক্তব্যে বলেন “শুধু সীমান্ত পাহারা নয়, আমরা মানবিক দায়িত্বও পালন করি। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদা প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।”

১১ বিজিবির এই মানবিক উদ্যোগ সীমান্তবাসীর মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছে। সীমান্ত রক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা যে একে অন্যের পরিপূরক—এটা আবারও প্রমাণ করলো এই আয়োজন।

নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) কর্তৃক এ ধরনের কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।