নিজস্ব প্রতিবেদক

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পুলিশ কর্তৃক ক্লুলেস ডাকাতি মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন, আন্ত: জেলা ডাকাত চক্রের ০৮ সদস্য গ্রেফতার এবং লুটকৃত মালামাল উদ্ধার সংক্রান্তে বিষয়ে প্রেসব্রিফিং!
শুক্রবার ২৩ মে সকাল ১১টার সময় বান্দরবান পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম(বার) মহোদয়ের সভাপতিত্বে সাংবাদিকবৃন্দদের সাথে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত  হয়!

সূত্র জানা যায় যে, গত ০৯/০৫/২০২৫ ইং দিবারাত অনুমান ৩টার ৪০ মিঃ সময়ে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন সশস্ত্র ডাকাত বান্দরবান লামা পৌরসভার লাইনঝিরি আবুল খায়ের টোব্যাকোর ডিপোর অফিসে কর্মচারীদের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এজাহারে বর্ণিত ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৫ হাজার ছয়শত আটত্রিশ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

উক্ত ঘটনার খবর থানা পুলিশকে অবগত করলে মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা ও লামা থানা পুলিশের একাধিক আভিযানিক টিম ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন, আসামি গ্রেফতার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে। পুলিশের আভিযানিক টিম বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম জেলার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত ০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে!
পুলিশের আভিযানিক টিম গত ১২ মে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত আসামি মোঃ মারফুল আরিফ, নাইমুল ইসলাম সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আভিযানিক টিম কর্তৃক গত ১২/০৫/২০২৫ ইং লামা থানা এলাকা থেকে আসামি মোঃ আবদুর রহিমকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামি রহিমের স্বীকারোক্তি এবং দেখানোমতে তার বসতবাড়ি থেকে লুণ্ঠিত ৫০,২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গত ১৫ মে বৃহস্পতিবার খসুজন কে গ্রেফতার করা হয়।
আভিযানিক টিম কর্তৃক মোঃ ওয়াছির আলী (৭০) পিতা-মৃত এরফান আলী মাতা -মৃত আক্তারুন নেছা এবং আনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা স্বীকার করে গত ৯ মে শুক্রবার ভোর বেলা তাদের ছেলে মোঃ করিম তাদের পূর্ব পরিচিত রহিমসহ আরো ৬/৭ জন অপরিচিত লোক তাদের বসত ঘরের সামনে এসে তাদেরকে ঘুম হতে ডেকে তুলে তাদের ঘরের ভিতরে অত্র মামলার ঘটনায় লুণ্ঠিত টাকা তাদের নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে তারা সকাল অনুমান সাড়ে ৯টায় ঘটিকার সময় তাদেরকে একটি ছোট বাজার করার প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে রেখেছে মর্মে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন!

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা জানায় যে, অত্র মামলার ঘটনার বিষয়ে জানাজানি হলে উল্লিখিত আসামীরা টাকা তাদের বসত বাড়ির দক্ষিণ পশ্চিম দিকের পাহাড়ের মধ্যে মাটির নিচে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে বলে স্বীকার করেন। তাদের দেখানো মতে তাদের বসত বাড়ির পশ্চিম দিকের পাহাড় থেকে মাটি খুড়ে পলিথিন দিয়ে মুড়ানো অবস্থায় ২লাখ সিয়াত্তর হাজার টাকার উদ্ধার করা হয়। আসামি আনোয়ারা বেগম বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এরপর আভিযানিক টিম গত ১৭ মে আসামি শাকিলা জান্নাত কে লামা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তি এবং দেখানোমতে তার বসত বাড়ির দরজার সামনে থেকে মাটি খুড়ে মাটির নিচে লুকানো ১লাখ টাকা এবং জনৈক আক্তার মিয়ার বসত বাড়ি থেকে মাটি খুড়ে ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এরপর আভিযানিক টিম অন্যতম সন্দিগ্ধ আসামি রুবেল কে গ্রেফতার করার জন্য তার বাড়ি চকরিয়া থানাধীন সাহারবিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি রুবেলে মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৮ মে রবিবার তাদের বসত ঘরের মাটির নীচ থেকে ৩০ লাখ ৭০ হসজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ!

চলমান অভিযানের ধারাবাহিকতায় আভিযানিক টিম গত বৃহস্পতিবার ২২ মে উল্লেখিত ঘটনার প্রধান মাস্টারমাইন্ড ডাকাত আবদুল করিমকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অর্থ) আবদুল করিম, জেলা গোয়েন্দা শাখা, লামা থানার অভিযানিক টিম চট্টগ্রাম জেলার চুনতি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লামা থানাধীন সিলেটি পাড়ায় তার পৈত্রিক বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সেখানে তার দেখানো মতে মাটির নিচে লুকানো অবস্থায় মাটি খুড়ে ৩টি দেশীয় তৈরি এলজি বন্দুক, ৬ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ৪ রাউন্ড তাজা বুলেট, ১ টি চাকু, ১ টি ছোরা, ১ টি গ্রিল কাটার এবং নগদ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এসময় বান্দরবান পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বান্দরবান জেলা প্রেসক্লাবে সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হক মিনার এবং  ইলেকট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়া সকল সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন!