কক্সবাজার বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল -এর নামে পরিবর্তন করে ‘শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরী পাবলিক স্কুল

প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০২৫

 

আবদুর রশিদ,নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি :

দেশের শিক্ষা খাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরব অথচ কার্যকর অবদান ক্রমশই প্রশংসনীয় হয়ে উঠছে। সীমান্ত রক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিজিবি যে শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে—তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কক্সবাজারে অবস্থিত “বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল”।

এই সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে এবার দেওয়া হলো এক বীর শহীদের নাম—‘শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরী পাবলিক স্কুল, কক্সবাজার’। এই নামকরণ কেবল একটি নাম পরিবর্তনের ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীর দেশপ্রেম ও ইতিহাসচেতনার প্রকাশ।

২৩ জুলাই ২০২৫, সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে (বাংলা ৮ শ্রাবণ ১৪৩২) আয়োজিত এক মর্যাদাপূর্ণ ও আবেগঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই নামফলক উন্মোচন করা হয়।

শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরী—এক অনন্ত অনুপ্রেরণা

এলাহী মনজুর চৌধুরী একজন বীর শহীদ, যিনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আত্মত্যাগ করেন। বিজিবি তাঁর স্মৃতিকে অমর রাখতে, তাঁর ত্যাগকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত করে গড়ে তুলতে এই স্কুলের নামকরণ করেছে তাঁর নামে।

উক্ত নামকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়নের সম্মানিত রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আকসার খান, এনডিসি, পিএসসি, পিএইচডি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ, পিবিজিএম, বিজিবিএমএস, সেক্টর কমান্ডার, রামু।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম, পিএসসি।

বর্ণাঢ্য এই নামকরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রী।

অনুষ্ঠানে শহীদের জীবনী পাঠ ও তাঁর আত্মত্যাগ নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করে শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

‘শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরী পাবলিক স্কুল, কক্সবাজার’ শুধু নামেই গৌরবের নয়—এর রয়েছে একটি গর্বিত ইতিহাস ও ধারাবাহিক কৃতিত্ব।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজার জেলার মধ্যে অন্যতম সেরা। একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা বিতর্ক, কুইজ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে জেলার গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়েও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।

শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব, শিক্ষার্থীদের নিষ্ঠা, অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং বিজিবি’র নিবিড় তত্ত্বাবধান এই স্কুলকে একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন,

“আমরা গর্বিত যে আমরা এমন একজন শহীদের নামে প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। এটা আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।”

“বাচ্চাদের মাঝে এখন থেকেই দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের মানসিকতা গড়ে তুলতে এই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু নাম নয়, একটি দায়বদ্ধতার পরিচয়।”

এক অভিভাবক করেন,“শুধু শিক্ষা নয়, মূল্যবোধ ও নৈতিকতায় শিক্ষিত প্রজন্ম গঠনের ক্ষেত্রে বিজিবি সত্যিই প্রশংসনীয় কাজ করছে।”

৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম, পিএসসি তাঁর বক্তব্যে বলেন,

“বিজিবি শুধু সীমান্ত পাহারার দায়িত্বেই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই স্কুলের নতুন নাম শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নতুন প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা এই স্কুলকে একটি আদর্শ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতে এর পরিসর আরও বাড়ানো হবে এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।”
একজন শহীদের নামে স্কুলের নামকরণ কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত করার, তাঁদের মাঝে আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের চেতনা জাগিয়ে তোলার এক কার্যকর মাধ্যম।

‘শহীদ এলাহী মনজুর চৌধুরী পাবলিক স্কুল, কক্সবাজার’-এর নতুন যাত্রা যেন সত্যিই আগামী দিনের নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক ও মানবিক মানুষ তৈরি করে, এই প্রত্যাশাই সকলের।